“ভাই সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে বাড়ি বানাচ্ছি। আমার বাড়িটা ভালো হওয়া চাই।”
বাড়ি ভালো হওয়া মানে কি শুধুই ভালো ডিজাইন? আর্কিটেক্ট খুব সুন্দর ডিজাইন করে দিলেন। সেই ডিজাইনে বাড়িও হল। পরের বর্ষায় দেখলেন, দেয়াল ড্যাম্প হয়ে গেছে। কিংবা দেখলেন আপনার সাধের বাড়ির রং দুই দিন পর পর উঠে যাচ্ছে। তাহলে এত সুন্দর ডিজাইনের বাড়ি বানায়ে লাভটা কি?
তাই একটা ভালো বাড়ি তৈরিতে ডিজাইনের সমান গুরুত্বপূর্ণ হল বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস। ভালো বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস ভালো বাড়ি বানানোর পূর্ব-শর্ত। প্রশ্ন হচ্ছে বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস বলতে কি বোঝায়? ইট, বালি, সিমেন্ট, রড, খোয়া, এমনকি পানি: এইসব ই হচ্ছে বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস। একজন ইঞ্জিনিয়ার বা সাইট সুপারভাইজার তো সার্বক্ষণিক ভাবে সাইট সুপারভাইজ করবেন ই। এরপরেও বাড়ি বানানোর আগে আপনার নিজেরও কিছু সাধারণ ধারণা থাকা জরুরি। আজকে তাই কথা বলব মেজর কিছু বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস এর কোয়ালিটি ভালো কি না সেটা কিভাবে বুঝবেন তা নিয়ে।
ইট
ভালো ইট বলতে বোঝায় শক্ত দৃঢ় এবং সম্পূর্ণভাবে পোড়া ইট। ভালো ইটের বৈশিষ্ট্যগুলো একবার জেনে নেয়া যাক:
👉 ভালো ইটের উপরে গুড়ো মাটি থাকবেনা। আর সবগুলো ইট মোটামুটি একই আকার এবং রঙ এর হবে।👉 দুটো ইট হাতে নিয়ে আঘাত করলে টুং টুং ধাতব শব্দ হবে।👉 দুটো ইটকে টি (T) এর মত আকারে ধরে ২ মিটার উঁচু থেকে ফেলে দিলে যদি ভেঙ্গে যায়, তাহলে সেই ইট ভালো না। আর যদি ভেঙ্গে না যায়, তাহলে ইটগুলো ভালো।👉 ইটের উপরিতল হবে সমতল। থাকবে না কোন ফাটল।

👉 সাধারণত ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর ইট ব্যবহার করা হয়।👉একটা ইট নিয়ে তার গায়ে নখের আঁচড় কাটার চেষ্টা করে দেখুন। ভালো ইটের গায়ে আঁচড় পড়বে না। যদি আঁচড় পরে তাহলে বুঝতে হবে সেই ইট ভালো না।👉একটি পাত্রে ইটকে ভিজিয়ে রাখুন। যদি ইট খারাপ হয়, দেখবেন ইট পানি শোষণ করে নিয়েছে এবং পানিতে বুদবুদ তৈরি হচ্ছে। পানি যদি ঘোলাটে হয়ে যায়, তার মানে এই ইট ভালো ইট না।👉একটি ইটকে ভেঙ্গে টুকরা করা হলে যদি টুকরা গুলোর রঙ দেখতে একই রকম হয়, তবে সেই ইটটি ভালো।👉 একটা ভালো ইটের মাপ আদর্শ থাকবে। যেমন: (৯.৫” x ৪.৫” x ২.৭৫”)👉 ভালো ইটের ওজন সাড়ে তিন কেজির বেশি হবে না।
বালি
কন্সট্রাকশনের জন্য ব্যবহার করতে হয় মোটা লাল বালি। আর সাইজ হতে হয় পাঁচ মিলিমিটারের কম। অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে বালিতে যেন ময়লা আবর্জনা মেশানো না থাকে। আরও কয়েকটা ব্যাপার অবশ্যই খেয়াল করা উচিৎ:
👉 বালি যদি ভালো হয় তাহলে হাতে মুঠ করে নিয়ে ঘষে ফেলে দিলে হাতে বালি আটকে থাকবেনা। 👉 পানির বোতলে বালি নিয়ে তাতে দ্বিগুণ পরিমাণ পানি দিয়ে ঝাঁকাতে হবে। এরপর ঘন্টাখানেক রেখে দিলে বালির মান অনুযায়ী লেয়ারে ভাগ হবে।
সিমেন্ট
একটি সিমেন্ট ব্যাগের ওজন আনুমানিক ৫০ কেজি হয়। সিমেন্ট প্রাথমিকভাবে জমাট বাঁধে ৩০ মিনিটে। আর ১০ ঘণ্টার মধ্যে সিমেন্ট অবশ্যই জমাট বেঁধে যাবে। ভালো সিমেন্টের বৈশিষ্ট্যগুলো অনেকটা এরকম:
👉 ভালো সিমেন্ট হাতে নিয়ে বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে ঘষলে ময়দার মত অনুভূতি হবে।👉 সিমেন্ট সংরক্ষণের ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিৎ। তিন মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলে সিমেন্টের কার্যক্ষমতা ২০% কমে যায়।👉দুই মাসের বেশি পুরানো সিমেন্ট ব্যবহারের আগে অবশ্যই পরীক্ষা করে নিতে হবে।👉 সরাসরি মেঝেতে সিমেন্ট রাখা উচিৎ না। কাঠের তক্তা দিয়ে তার উপরে সিমেন্ট রাখতে হবে।

খোয়া
অতিরিক্ত পোড়া ইট দিয়ে খোয়া বানানো হয় যা ঢালাই এর কাজে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া অনেক সময় পাথর দিয়েও ঢালাই দেয়া হয়। কনস্ট্রাকশনের দরকারের উপর ডিপেন্ড করে এগুলোর সাইজ সাধারণত ৪০, ২০ ও ১০ মিলি হয়ে থাকে।
👉 বাড়ির ঢালাই এর কাজে সাধারণত ১০ থেকে ২০ মিলি পাথর বা খোয়া ব্যবহার করা হয়।👉 খোয়া ব্যবহার করার সময় কোন রকম কাদামাটি, শ্যাওলা বা ময়লা থাকা যাবে না।👉 খোয়া অবশ্যই দৃঢ় শক্ত আর টেকসই হতে হবে।👉 অতিরিক্ত চ্যাপ্টা বা লম্বা খোয়া ব্যবহার করা যাবেনা।
পানি
সাধারণত মিউনিসিপালিটি থেকে সরবরাহকৃত খাওয়ার পানি দিয়েই নির্মাণ-কাজ করতে হয়। সমুদ্রের পানি বা মাটির গভীরের পানি ব্যবহার করা উচিত নয়। সমুদ্রের পানিতে অনেক লবণ থাকে। পানিতে লবণ, এসিড বা অন্য ময়লা আছে কিনা সেটা পরীক্ষা করে দেখা উচিৎ। এই বিষয়টা কেউ তেমন গুরুত্ব দিয়ে দেখে না। কিন্তু লবণ থেকে কোরোশন সৃষ্টি হয়। এই কোরোশন আপনার বিল্ডিং এর ক্ষয় এর প্রধান কারণ। তাই পানিতে লবণ থাকার কারণে আপনার বিল্ডিং এর আয়ু হয়ত ১০-১৫ বছর কমেও যেতে পারে।
একটা সুন্দর ডিজাইন দেখলেই বুঝা যায়, ডিজাইনটা সুন্দর। ম্যাটেরিয়ালস কিন্তু এমন না। আপনাকে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। আপনার ইঞ্জিনিয়ার তো এগুলো দেখবেন ই। কিন্তু বাড়ির মালিক হিসেবে এতগুলো টাকা ইনভেস্ট করার আগে আপনার ও এই ব্যাপারগুলো ডিজাইনের সমান, ক্ষেত্র বিশেষে বেশি গুরুত্ব দেয়া দরকার। একটা এভারেজ ডিজাইনের বাড়িতে হয়ত আপনি দীর্ঘদিন থাকতে পারবেন, যদি বাড়িটার নির্মাণ ভালো হয়। আর নির্মাণের সবচেয়ে বড় নিয়ামক হচ্ছে ভালো বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস। তাই নিজে যতটা সম্ভব এই ব্যাপারগুলো খেয়াল রাখুন।
এরপর ও কিছু জানার থাকলে, স্পেশালিষ্টদের পরামর্শ নিন। ঢাকা ডিজাইনারের সাথে এপয়েন্টমেন্ট ঠিক করতে এই লিঙ্কে মেসেজ দিতে পারেন অথবা সরাসরি +8801701357825 এ কল করে এপয়েন্টমেন্ট বুক করতে পারেন।
Kommentare