ঢাকা শহরে বসবাস করেন? অথবা অন্য কোনো বড় শহরে? তাহলে আপনি নিশ্চয়ই জানেন, ছোট জায়গায় কতটা অসুবিধা হয়! আজকাল ফ্ল্যাট কিনতে গেলে দেখবেন, প্রতি বর্গফুটের দাম আকাশছোঁয়া। তাই বড় ফ্ল্যাট নেওয়া অনেকের জন্যই সম্ভব হয় না। ফলে ছোট স্পেসে সবকিছু গুছিয়ে রাখা এবং সেই স্পেসকে বড় দেখানো: এই দুটো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় আমাদের।
আমি প্রায়ই শুনি, "বাসায় জায়গা নেই", "এত ছোট ফ্ল্যাটে কি করে সবকিছু রাখব?"। এসব সমস্যার সমাধান আছে! আসুন দেখি কিভাবে আপনার ছোট জায়গাকে বড় দেখাতে পারেন, সাথে সাথে ফাংশনাল ও রাখতে পারেন।
১। হালকা রং ব্যবহার করুন
রং একটা বড় ফ্যাক্টর যেটা আপনার স্পেসকে ছোট বা বড় দেখাতে পারে। আপনার বাসার দেয়ালে গাঢ় রং ব্যবহার করলে স্পেসটা ছোট মনে হবে। অন্যদিকে হালকা রং বাসার আয়তন বাড়ায়। সবচেয়ে ভালো হবে যদি আপনি সাদা, অফ-হোয়াইট, হালকা বেজ কিংবা পাস্টেল কালার ব্যবহার করেন।
রাতে যখন ঘরে আলো জ্বালান, তখন হালকা রঙের দেয়ালে আলো বেশি প্রতিফলিত হয়। এতে ঘর আরও বড় এবং উজ্জ্বল দেখায়। গাঢ় রং ব্যবহার করতে চাইলে, একটা দেয়ালে অ্যাকসেন্ট কালার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।

২। আয়না ব্যবহার করুন
আপনার জায়গাকে দ্বিগুণ বড় দেখাতে চান? আয়না টাঙান। আয়না হল ছোট স্পেসকে বড় দেখানোর সবচেয়ে কার্যকরী উপায়। বড় আয়না দেয়ালে লাগালে স্পেসটা বড় দেখায় এবং আলো ছড়িয়ে পড়ে।
ডাইনিং এরিয়া কিংবা লিভিং রুমের দেয়ালে একটা বড় আয়না টাঙাতে পারেন। এতে ঘরের আলো ভালোভাবে প্রতিফলিত হয় এবং জায়গাটা বড় দেখায়। সাথে সাথে বাসাও সুন্দর দেখায়।
আয়নার সিলিং থেকে মেঝে পর্যন্ত লম্বা হওয়া ভালো। এতে রুমের উচ্চতা বেশি মনে হবে। যদি সম্ভব হয়, আয়নাটা জানালার বিপরীতে রাখুন। এতে প্রাকৃতিক আলো বেশি প্রতিফলিত হবে।

৩। মাল্টিফাংশনাল ফার্নিচার ব্যবহার করুন
ছোট জায়গায় সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে স্টোরেজ। এই সমস্যা সমাধানে মাল্টিফাংশনাল ফার্নিচার খুবই কার্যকরী। উদাহরণ হিসেবে, এমন সোফা কিনতে পারেন যেটাকে বেড হিসেবে ব্যবহার করা যায়। অথবা এমন বেড যার নিচে স্টোরেজ আছে।
আমাদের দেশে বক্স বেড বেশ জনপ্রিয়। বক্স বেডের নিচে অনেক জিনিস রাখা যায়। পাশাপাশি, ফোল্ডিং টেবিল, বাইফোল্ড চেয়ার ইত্যাদিও ব্যবহার করতে পারেন যেগুলো ব্যবহার না করলে গুটিয়ে রাখা যায়।
কফি টেবিল এমন কিনুন যেটার ভিতরে স্টোরেজ আছে। নিচে দেখুন, এরকম একটা টেবিলের উপরের অংশ উঠানো যায় এবং ল্যাপটপ টেবিল হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

৪। সিলিং থেকে মেঝে পর্যন্ত পর্দা ব্যবহার করুন
জানালায় ছোট পর্দা ব্যবহার করলে রুম ছোট দেখায়। বরং সিলিং থেকে মেঝে পর্যন্ত লম্বা পর্দা টাঙান। এতে ঘরের উচ্চতা বেশি মনে হবে।
পর্দার রং হালকা হওয়া উচিত যাতে আলো ভেতরে আসতে পারে। শিয়ার কিংবা হালকা কাপড়ের পর্দা ব্যবহার করুন। মনে রাখবেন, পর্দা জানালার চেয়ে একটু বড় হলে ভালো। পর্দা জানালার দুই পাশে একটু বেশি জায়গা নিলে, জানালাটা আসলে যতটা, তার চেয়ে বড় মনে হয়।
৫। ভার্টিকাল স্পেস ব্যবহার করুন
বেশিরভাগ লোক শুধু হরাইজন্টাল স্পেস (মেঝেতে যতটুকু জায়গা) নিয়ে ভাবে। কিন্তু ভার্টিকাল স্পেস (দেয়ালের উপরের দিকে যতটুকু জায়গা) ব্যবহার করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
সিলিং থেকে নিচে পর্যন্ত শেলফ লাগাতে পারেন। টিভি ইউনিট, বই, শোপিস সবকিছু দেয়ালে টাঙিয়ে রাখুন। ফ্লোটিং শেলফ ব্যবহার করলে মেঝেতে জায়গা নষ্ট হয় না, অথচ স্টোরেজ পাওয়া যায়।
বাড়ির উপরের অংশে স্টোরেজ বক্স রাখতে পারেন। এমন জিনিস যেগুলো আপনি প্রায়ই ব্যবহার করেন না, সেগুলো উপরের দিকে রাখুন।

৬। অপ্রয়োজনীয় জিনিস রাখবেন না
সত্যি বলতে, আমরা অনেক অপ্রয়োজনীয় জিনিস জমা করি। ছোট জায়গায় এসব জিনিস রাখার জায়গা নেই। তাই সময় নিয়ে ভাবুন, কোন জিনিসটা আপনার সত্যিই দরকার, আর কোনটা দরকার নেই। দরকারী জিনিসগুলো সাজিয়ে রাখুন, বাকিগুলো ফেলে দিন বা দান করে দিন।
মনে রাখবেন, ছোট জায়গায় ক্লাটার (অগোছালো অবস্থা) স্পেসকে আরও ছোট দেখায়। তাই সবকিছু পরিপাটি রাখুন।
৭। হালকা এবং কম্প্যাক্ট ফার্নিচার ব্যবহার করুন
বড় এবং ভারী ফার্নিচার জায়গা বেশি নেয় এবং স্পেসকে ছোট দেখায়। ছোট স্পেসের জন্য হালকা, কম্প্যাক্ট ফার্নিচার বেছে নিন। এ ব্যাপারে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান ডিজাইন থেকে অনুপ্রেরণা নিতে পারেন।
উদাহরণস্বরূপ, কোণগুলো গোল বা বাঁকা ফার্নিচার বেশি জায়গা নিয়ে থাকে। বরং সোজা লাইনের ডিজাইনের ফার্নিচার বেছে নিন। সোফা কেনার সময় লম্বা লেগ ওয়ালা সোফা কিনুন, নিচে স্পেস থাকলে ঘর বড় দেখায়।
৮। প্রাকৃতিক আলো বাড়ান
প্রাকৃতিক আলো যত বেশি ঘরে ঢুকবে, ঘর তত বড় দেখাবে। পর্দা হালকা রাখুন যাতে আলো ঢুকতে পারে। জানালার সামনে বড় ফার্নিচার রাখবেন না।
যদি আপনার ঘরে প্রাকৃতিক আলো কম ঢোকে, তাহলে কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা করুন। সিলিংয়ে একটা বড় লাইট রাখার বদলে, ছোট ছোট অনেকগুলো লাইট রাখুন বিভিন্ন জায়গায়। যেমন টেবিল ল্যাম্প, ফ্লোর ল্যাম্প ইত্যাদি। আলো যত ছড়িয়ে থাকবে, জায়গা তত বড় দেখাবে।
৯। হরাইজন্টাল লাইন ব্যবহার করুন
ঘরকে চওড়া দেখাতে চাইলে, হরাইজন্টাল লাইন ব্যবহার করুন। যেমন, দেয়ালে হরাইজন্টাল স্ট্রাইপ পেইন্ট করতে পারেন, অথবা হরাইজন্টাল প্যাটার্নের ওয়ালপেপার লাগাতে পারেন।
আবার ঘরকে লম্বা দেখাতে চাইলে, ভার্টিকাল প্যাটার্ন ব্যবহার করুন।
১০। সরু কার্পেট ব্যবহার করুন
কার্পেটের সাইজ ও গুরুত্বপূর্ণ। ছোট কার্পেট স্পেসকে ছোট দেখায়। বরং বড় কার্পেট ব্যবহার করুন যেটা সোফা, টেবিল সবকিছুকে ঢেকে রাখে।
এই টিপসগুলো অবলম্বন করে, আপনি আপনার ছোট ফ্ল্যাট বা বাসাকে মনের মত সাজাতে পারবেন। মনে রাখবেন, এটা আপনার বাসা, আপনি যেভাবে আরাম পাবেন, সেভাবে সাজাবেন। এই টিপসগুলো শুধুমাত্র গাইডলাইন।
Comments