বসুন্ধরা বনাম উত্তরা: ঢাকার হাউজিং মার্কেটে কোথায় বিনিয়োগ করবেন?
- anjoncucse
- 15 hours ago
- 4 min read
ঢাকায় এপার্টমেন্ট কিনার কথা ভাবছেন? তাহলে আপনার মনে দুটো প্রশ্ন আসতেই পারে – বসুন্ধরা না উত্তরা, কোথায় কিনলে ভালো হবে? বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা এবং উত্তরা, দুটিই ঢাকার উত্তর দিকে অবস্থিত এবং নিজস্ব কিছু ইউনিক বৈশিষ্ট্য এর জন্য সবার নজর কাড়ছে। এই ব্লগে আমরা এই দুই এলাকার সুবিধা, অসুবিধা, এপার্টমেন্ট এর মূল্য, সম্ভাবনা এবং ঝুঁকি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা বেশ সুপরিকল্পিত এবং অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত। এটি মূলত বসুন্ধরা গ্রুপ দ্বারা ডেভেলপ করা হয়েছে এবং প্রশস্ত রাস্তা,এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধার জন্য সুপরিচিত।
বসুন্ধরায় আবাসিক এর এপার্টমেন্ট বিল্ডিং এ প্রতি বর্গফুট এর মূল্য সাধারণত ৳৮,০০০ থেকে ৳১৩,০০০ এর মধ্যে হয়ে থাকে। যদিও এটি একটি গড় হিসাব, তবে ব্লকের অবস্থান, ফ্ল্যাটের আকার, এবং সুযোগ-সুবিধার ওপর ভিত্তি করে এই মূল্য পরিবর্তিত হতে পারে। বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে এই মূল্য আরও বেশি হয়ে থাকে।
মূল সুবিধা:
পরিকল্পিত উন্নয়ন: বসুন্ধরা একটি মাস্টার প্ল্যানের আওতায় ডেভেলপ করা হয়েছে, যার ফলে এখানে প্রশস্ত রাস্তা, পর্যাপ্ত খোলা জায়গা এবং আধুনিক ড্রেনেজ সিস্টেম রয়েছে।
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (NSU) কাছাকাছি: দেশের অন্যতম জনপ্রিয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত। এর আশেপাশে আরও অনেক স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের এবং তাদের পরিবারের জন্য এলাকাটিকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
যমুনা ফিউচার পার্কের সান্নিধ্য: দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম শপিং মল যমুনা ফিউচার পার্ক বসুন্ধরার খুব কাছেই অবস্থিত। এটি এই এলাকার জীবনযাত্রার মানকে উন্নত করেছে এবং বিনোদনের সুযোগ বাড়িয়েছে।
নিরাপত্তা: বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা তার উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য পরিচিত। এখানে একটি গেটেড কমিউনিটির মতো পরিবেশ রয়েছে, যা বাসিন্দাদের ভিতর নিরাপত্তা নিয়ে বেশ ভালোই স্বস্তি দেয়।
অন্যান্য অবকাঠামো: বসুন্ধরায় আধুনিক সকল নাগরিক সুবিধা বিদ্যমান। এখানে রয়েছে উন্নতমানের হাসপাতাল (যেমন এভারকেয়ার হসপিটাল), শপিং মল, সুপারশপ, রেস্টুরেন্ট, ব্যাংক, জিমনেশিয়াম, এবং বিনোদন কেন্দ্র।
টার্গেট ডেমোগ্রাফিক: বসুন্ধরা মূলত উচ্চ-মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত পরিবারের জন্য একটি পছন্দের স্থান। অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি (NRBs) এবং বিদেশী নাগরিকও এখানে বিনিয়োগ করতে বা বসবাস করতে আগ্রহী। এছাড়া, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের এবং তরুণ চাকরিজীবীদের কাছেও এর চাহিদা রয়েছে।
বিনিয়োগের সম্ভাব্য আয় (ROI) এবং ভাড়ার চাহিদা: বসুন্ধরায় বিনিয়োগের সম্ভাব্য আয় (ROI) বেশ ভালো। পরিকল্পিত উন্নয়ন এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধার কারণে এখানে এপার্টমেন্ট এবং জমির দাম সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখানে ফ্ল্যাটের ভাড়ার চাহিদা প্রায় ৭৪% বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্লটের চাহিদা ২৪৩% বেড়েছে।
উত্তরা এলাকা
উত্তরা ঢাকার অন্যতম আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা এবং সুপরিকল্পিত উপশহরগুলোর একটি, যা সময়ের সাথে সাথে ব্যাপক পরিবর্তন ও উন্নয়নের সাক্ষী হয়েছে।
উত্তরায় আবাসিক বিল্ডিং এ প্রতি বর্গফুট এর মূল্য সাধারণত ৳৯,০০০ থেকে ৳১৬,০০০ এর মধ্যে থাকে। এর বিভিন্ন সেক্টরের ওপর ভিত্তি করে এই মূল্য পরিবর্তিত হয়। যেমন, মেট্রো রেল স্টেশনের কাছাকাছি বা প্রধান সড়কের পাশের ফ্ল্যাটের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি হতে পারে।
মূল সুবিধা:
মেট্রো রেল সংযোগ: উত্তরায় মেট্রো রেলের (MRT Line-6) সরাসরি সংযোগ রয়েছে, যা এই এলাকার সবচেয়ে বড় সুবিধাগুলোর মধ্যে একটি। এর মাধ্যমে শহরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় দ্রুত এবং যানজটমুক্তভাবে যাতায়াত করা সম্ভব হচ্ছে।
বিমানবন্দরের সহজ এন্ট্রি: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর উত্তরায় অবস্থিত, যা রেগুলার এয়ারপোর্ট ব্যবহারকারীদের জন্য একটি বিশাল সুবিধা।
আসন্ন বাণিজ্যিক হাব: উত্তরা ধীরে ধীরে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্রে রূপান্তরিত হচ্ছে। এখানে নতুন নতুন অফিস, শপিং কমপ্লেক্স, এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে, যা কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করছে এবং এলাকার অর্থনৈতিক গুরুত্ব বাড়াচ্ছে।
অবকাঠামো এবং সংযোগ: উত্তরায় একটি সুপরিকল্পিত অবকাঠামো রয়েছে। এখানে অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়), হাসপাতাল, ক্লিনিক, শপিং মল, সুপারশপ, এবং রেস্টুরেন্ট রয়েছে। সেক্টরভিত্তিক পরিকল্পনা হওয়ায় এখানে যাতায়াত এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রা তুলনামূলকভাবে সহজ।
টার্গেট ডেমোগ্রাফিক: উত্তরা মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পরিবার এবং চাকরিজীবীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। বিমানবন্দর এবং বাণিজ্যিক হাবের কারণে এখানে চাকরিজীবী এবং ব্যবসায়ীদেরও আনাগোনা বেশি।
বিনিয়োগের সম্ভাব্য আয় (ROI) এবং ভাড়ার চাহিদা: মেট্রো রেলের সংযোগ, বিমানবন্দরের সান্নিধ্য, এবং ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যিক গুরুত্বের কারণে উত্তরায় বিনিয়োগের সম্ভাব্য আয় (ROI) বেশ প্রতিশ্রুতিশীল। এখানে এপার্টমেন্ট ও জমির মূল্য বৃদ্ধির হার স্থিতিশীল এবং ভাড়ার চাহিদাও সবসময় বেশি থাকে, বিশেষ করে মেট্রো রেল স্টেশনের কাছাকাছি এলাকায়।
সুবিধাসমূহ (Pros):
বসুন্ধরা:
উন্নত ও আধুনিক জীবনযাত্রার পরিবেশ।
সুপরিকল্পিত এবং দৃষ্টিনন্দন ডিজাইন।
উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল (NSU, এভারকেয়ার) এর সান্নিধ্য।
বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য উপযুক্ত।
উত্তরা:
মেট্রো রেলের মাধ্যমে দ্রুত ও সহজ যোগাযোগ।
বিমানবন্দরের কাছাকাছি অবস্থান।
আবাসিক ও বাণিজ্যিক উভয় প্রকারের সুবিধার সমন্বয়।
বিভিন্ন বাজেট রেঞ্জের ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টের সহজলভ্যতা।
প্রাণবন্ত এলাকা।
অসুবিধাসমূহ (Cons):
বসুন্ধরা:
সাধারণত উচ্চমূল্যের সম্পত্তি, যা সবার বাজেটের মধ্যে নাও থাকতে পারে।
গণপরিবহনের সহজলভ্যতা উত্তরার তুলনায় কিছুটা কম।
প্রধান প্রবেশপথগুলোতে ছুটির দিনে বা অফিস টাইমে যানজট হতে পারে।
উত্তরা:
কিছু কিছু সেক্টরে ঘনবসতি বেশি এবং যানজট তুলনামূলকভাবে বেশি হতে পারে।
পুরনো সেক্টরগুলোতে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা কিছুটা কম হতে পারে।
উচ্চ ভাড়ার চাহিদা ও বাণিজ্যিক কার্যকলাপের কারণে কিছু অংশে কোলাহল বেশি হতে পারে।
আমাদের পরামর্শ
Long-term Investment এর জন্য বসুন্ধরা চমৎকার। এখানে ধীরে ধীরে কিন্তু নিশ্চিতভাবে এপার্টমেন্ট এবং জমির মূল্য বৃদ্ধি পাবে।
যদি আপনার প্রধান লক্ষ্য হয় নিয়মিত ভাড়ার আয়, তাহলে উত্তরা এবং বসুন্ধরা উভয়ই ভালো।
যারা কর্মস্থলের কাছাকাছি বা শহরের কেন্দ্রে দ্রুত যাতায়াত করতে চান, তাদের জন্য উত্তরা মেট্রো রেলের সুবিধার কারণে বেশি উপযুক্ত।
যদি আপনার বাজেট বেশি হয় এবং আপনি একটি বিলাসবহুল, সুপরিকল্পিত এবং সুরক্ষিত পরিবেশে বসবাস করতে চান, তাহলে বসুন্ধরা আপনার জন্য সেরা।
যদি আপনার বাজেট কম হয় কিন্তু আপনি আধুনিক সুবিধা এবং চমৎকার যোগাযোগ ব্যবস্থা সহ একটি এলাকায় বিনিয়োগ করতে চান, তাহলে উত্তরা একটি দারুণ বিকল্প। এখানে বিভিন্ন আকারের এবং দামের অ্যাপার্টমেন্ট খুঁজে পাওয়া সম্ভব।
উভয় এলাকাই দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত।
স্বল্পমেয়াদী মূলধন লাভের জন্য উত্তরা কিছুটা দ্রুত ফল দিতে পারে, বিশেষ করে মেট্রো রেলের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোতে।
আপনার ব্যক্তিগত প্রয়োজন, বাজেট এবং চাহিদার ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিন। তবে, বিনিয়োগ করার আগে সর্বদা বাজার বিশ্লেষণ, ডেভেলপারদের সুনাম এবং আইনি দিকগুলো ভালোভাবে যাচাই করে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
Comments