বাংলাদেশে ফ্ল্যাট কেনার সময় ৫টি বড় স্ক্যাম এড়ানোর সম্পূর্ণ চেকলিস্ট
- anjoncucse
- 2 days ago
- 3 min read
বাংলাদেশে ফ্ল্যাট/অ্যাপার্টমেন্ট কেনা অনেকের জীবনভর সঞ্চয় দিয়ে করা সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ।ভুল জায়গায় ভরসা করলে বাকি জীবন বোঝা টানতে হয়। রেজিস্ট্রেশন আটকে যাওয়া, হ্যান্ডওভার না পাওয়া, বা ইউটিলিটি (বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস) না আসা খুব কমন ঘটনা। তাই আবেগ নয়, Step-by-step due diligence will be your safety net.
নিচে ৫টা কমন স্ক্যাম, রিয়াল-লাইফ রিস্ক, আর প্রতিটা স্ক্যাম এড়ানোর প্র্যাকটিক্যাল চেকলিস্ট দেওয়া হল।
স্ক্যাম ১: নকল/ডুপ্লিকেট দলিল (Title Deed Fraud)
আসল মালিক না হয়ে কেউ ডুপ্লিকেট বা টেম্পার্ড ডকুমেন্ট দেখিয়ে ফ্ল্যাট “বিক্রি” করতে পারে। অনেক সময় ডিসপিউটেড ল্যান্ড/প্রজেক্ট নিয়েও বুকিং নেয়।
চেকলিস্ট (Verification)
Sub-Registrar Verification: রেকর্ড–কপি মিলিয়ে দেখুন; একই দলিল দুইবার ট্রান্সফার হয়েছে কি না খুঁজুন।
Chain of Ownership: মূল Title Deed → POA/Allotment/CS/RS/মৌজা রেকর্ড—চেইন ব্রেক যেন না থাকে।
Mutation & Tax: মিউটেশন এবং খতিয়ান আপডেটেড কি না, হোল্ডিং ট্যাক্স/খাজনা ক্লিয়ার কি না।
Secure Proof of Purchase: অগ্রিম/বুকিং মানি দিলেই Sale Agreement নিন এবং তারিখ, রিসিট, পেমেন্ট মেথড ক্লিয়ার ভাবে উল্লেখ করুন।
স্ক্যাম ২: ইচ্ছাকৃত দেরি, তারপর উধাও
“আরেকটু টাইম দিন” বলে ডেলিভারি পুশ করতে করতে কেউ কেউ হ্যান্ডওভারই দেয় না। হোম–লোন + ভাড়া—দুই দিকেই চাপ পড়ে।
চেকলিস্ট (Due Diligence)
Track Record, not Showcase: ডেভেলপার এর ১–২টা শো-পিস প্রোজেক্ট নয়, বিগত কয়েক বছরে কতটি প্রোজেক্ট কোন সময়ের মধ্যে হ্যান্ডওভার হয়েছে প্রজেক্ট–ওয়াইস দেখে নিন (লোকেশন, সাইজ, টাইমলাইন)।
Credentials: বৈধ REHAB মেম্বারশিপ/ট্রেড লাইসেন্স সব আপডেটেড?
Agreement Hygiene: Project completion date, delay clause (পেনাল্টি/কমপেনসেশন), force majeure—স্পষ্ট ভাষায় লেখা আছে?
Escalation Path: আপনার সমস্যা গুলো কাস্টমার সাপোর্ট কাকে রিপোর্ট করে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার (Senior Official) কাছে তুলে ধরে বা কাকে জবাবদিহি করে? এসকেলেশন কন্ট্যাক্ট অর্থাৎ যদি কাস্টমার সাপোর্ট আপনার সমস্যা সমাধান করতে না পারে, তবে আপনি সরাসরি প্রতিষ্ঠানের কোন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের (যেমন: Head of Sales, CEO, Director of Customer Relations ইত্যাদি) সাথে যোগাযোগ করবেন—তাদের নাম, পদবি, এবং যোগাযোগের তথ্য জেনে নিন।
স্ক্যাম ৩: Developer Mortgage Fraud (Bank Loan Trap)
ডেভেলপার একই ফ্ল্যাট/প্রজেক্ট ব্যাংকে মর্টগেজ রেখে লোন তোলে। পরে ডিফল্ট করলে ব্যাংকের ক্লেইম পড়ে আপনার ফ্ল্যাটের ওপর। আদালতের দ্বারস্থ হয়ে অস্থায়ী পজেশন মিললেও অফিসিয়াল কাগজ আটকে যেতে পারে যতক্ষণ না ব্যাংকের বিষয় সুরাহা হয়।
চেকলিস্ট (Protection)
Bank NOC (Flat-Specific): যে ইউনিট নিচ্ছেন, সেই ইউনিটের bank NOC/release letter চাইবেন। “প্রজেক্টে লোন আছে, কিন্তু আপনার ফ্ল্যাট ফ্রি”–এর লিখিত প্রমাণ জরুরি।
Encumbrance Check: যে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের আওতায় পড়ে, সেখানে Encumbrance Certificate (lien/mortgage status) যাচাই করুন।
Financial Health Signal: কোম্পানির credit rating অথবা ব্যাংকের হোম–লোন প্রি-এপ্রুভাল tendency এর ব্যপারে খোঁজ নিন; বহু ব্যাংক রিস্কি ডেভেলপারকে ফান্ড করতে চায় না। আপনার পরিচিত কোনও ব্যাংকার এর সাথে কথা বলেই এই বিষয় গুলোর ব্যপারে খোজ নেওয়া সম্ভব।
স্ক্যাম ৪: Approved Plan থেকে বিচ্যুতি (Size Shrinkage, Parking Missing)
ব্রোশিউরে 1,800 sft কিন্তু হ্যান্ডওভারে হলো 1,640 sft, বা promised 1 car parking per flat কিন্তু হ্যান্ডওভারে “কমন পার্কিং” লেখা।
চেকলিস্ট (Compliance)
RAJUK Approval Papers: RAJUK approval number, approved plan, land use clearance নিজে দেখে নিন; কপি রেখে দিন।
BNBC & Fire Compliance: সিঁড়ি, setback, lift, fire staircase BNBC অনুযায়ী আছে কি না ড্রইং + অন-সাইট মিলিয়ে দেখুন।
Contract Lock-in: Agreement–এ net saleable area (measurement method সহ), specs & amenities ক্লিয়ার করে লিখে নিন; deviation হলে variation order/compensation কিভাবে হবে সেই clause গুলোতে নজর দিন।
Snag List on Handover: মাপ–ঝোক, ফিনিশিং, ফিক্সচার এর একটা snag list করে হ্যান্ডওভারের আগে মিলিয়ে নিন। সেই লিস্টের প্রতিটা 'টিক' না পড়লে, আপনি চূড়ান্ত স্বাক্ষর (সাইন-অফ) দেবেন না। এটাই আপনার শেষ সুযোগ, সুযোগ হাতছাড়া করবেন না!
স্ক্যাম ৫: ইউটিলিটি কানেকশন মিসিং/অকারণে দেরি
চাবি হাতে কিন্তু electricity/water/gas নেই। পরে জানা যায় FAR/setback/zoning ভায়োলেশনের জন্য NOC আটকে আছে; রেজিস্ট্রেশনও স্লো।
চেকলিস্ট (Assurance)
Permission Trail: DESCO/DPDC, WASA, Titas এ application status/permission letters দেখুন; ফাইলিং ডেট, file number, pending reason নোট করুন।
Completion/Occupancy: Applicable হলে completion/occupancy certificate স্ট্যাটাস নিন।
Utility Readiness: মিটার রুম, সাব স্টেশন, পাম্প, গ্যাস রাইজার on–site readiness চেক করুন (ছবি/রিপোর্ট সংরক্ষণে রাখুন)।
Registration Readiness: Deed of Agreement এ রেজিস্ট্রেশনের টাইমলাইন ও কন্ডিশন ক্লিয়ার আছে কি না দেখুন।
ফ্ল্যাট কেনা মানে শুধু মাসে-মাসে ইন্সটলমেন্ট দেওয়া নয়। এটা ডকুমেন্ট + কমপ্লায়েন্স + ফাইন্যান্সিয়াল ডিসিপ্লিন-এর কম্বো। তারপরও সবচেয়ে স্মার্ট পদক্ষেপ, শুরুর দিকেই একজন লাইসেন্সড আইনজীবী/প্রফেশনাল কনসালট্যান্টকে যুক্ত করা। শুরুতে একটু খরচ বাঁচাতে গিয়ে পরে কোর্ট-কাচারিতে দৌড়াতে হয় এটা যেন না হয়।
সমুদ্রযাত্রায় জাহাজ, মানচিত্র আর অনুমতি তিনটাই লাগে। ফ্ল্যাট কেনায় সেই তিনটা হলো ডকুমেন্ট, প্ল্যান, পারমিশন। এগুলো পাস করলে তবেই যাত্রা শুরু করুন। তাড়াহুড়া করে শর্টকাট নিলে মাঝপথে ডুবে যেতে পারে — নৌকাটা নয়, আপনার স্বপ্নটা।
Note: এই ব্লগটি ইনফরমেশনাল। লিগ্যাল/রেজিস্ট্রেশন–সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের আগে লাইসেন্সড পেশাদার/আইনজীবীর পরামর্শ নিন।
