ঢাকার প্রিমিয়াম এলাকাগুলো—যেমন বসুন্ধরা, উত্তরা, গুলশান বা বনানী—এ জমির দাম যেন আকাশ ছুঁয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই দাম বাড়ছে, আর এই অবস্থায় এসব জায়গায় নিজের একটা ফ্ল্যাট কেনা ক্রমশ স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। কিন্তু একটা স্মার্ট উপায় আছে যার মাধ্যমে এই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব? সেটা হলো ল্যান্ড শেয়ার। আজ আমরা এই কনসেপ্টটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব—এটা কী, কীভাবে কাজ করে, এর সুবিধা কী, এবং কেন এটা আপনার জন্য একটা ভালো অপশন হতে পারে।

ল্যান্ড শেয়ার কী?
সহজ কথায়, ল্যান্ড শেয়ার হলো এমন একটা প্রক্রিয়া যেখানে একাধিক মানুষ একসঙ্গে মিলে একটি জমি কিনে নেয় এবং সেখানে তাদের নিজেদের জন্য অ্যাপার্টমেন্ট বানায়। এতে কী হয়? জমির দামটা সবাই মিলে ভাগ করে নেওয়ায় প্রতিজনের খরচ অনেক কমে যায়। এটা একটু গ্রুপে পড়াশোনার মতো—একা একা বই কিনলে পকেটে চাপ পড়ে, কিন্তু বন্ধুরা মিলে শেয়ার করলে খরচ অনেক কমে যায়।
ধরুন, আপনি একা বসুন্ধরায় জমি কিনতে গেলেন। তিন কাঠার জমির দাম ৩ কোটি টাকা। আপনার পক্ষে একা এত টাকা দেওয়া কঠিন। কিন্তু যদি ছয়জন মিলে কিনেন? তাহলে প্রতিজনের ভাগে পড়ে মাত্র ৫০ লক্ষ টাকা। এরপর সেই জমিতে একটা বিল্ডিং বানিয়ে ফ্ল্যাট ভাগ করে নিলেন। এই সহজ কনসেপ্টটাই হলো ল্যান্ড শেয়ার।
চলুন, একটা বাস্তব উদাহরণ দিয়ে বিষয়টা পরিষ্কার করি। ধরা যাক, আপনি এবং আরও পাঁচজন বন্ধু বা পরিচিত মানুষ মিলে বসুন্ধরায় তিন কাঠার একটা জমি কিনতে চান। জমির দাম ধরছি ৩ কোটি টাকা। ছয়জনে সমান ভাগ করলে প্রতিজনের খরচ পড়বে ৫০ লক্ষ টাকা।
ধাপ ১: জমি কেনা
আপনারা ছয়জন মিলে জমিটা কিনে ফেললেন। জমির মালিকানা আইনিভাবে ছয়জনের নামে রেজিস্ট্রি করা হলো। এখানে একটা জিনিস মনে রাখবেন—জমি কেনার সময় সবাইকে পরিষ্কার চুক্তি করে নিতে হবে যাতে পরে কোনো ঝামেলা না হয়।
ধাপ ২: বিল্ডিং প্ল্যান করা
এবার আপনারা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলেন যে জমিতে একটা জি+৬ ভবন বানাবেন। মানে, গ্রাউন্ড ফ্লোর প্লাস ছয় তলা। প্রতিটি তলায় একটা করে ফ্ল্যাট থাকবে, আর গ্রাউন্ড ফ্লোরে থাকবে পার্কিং, লিফট, আর কিছু কমন স্পেস। সুতরাং, ছয়জনের জন্য ছয়টা ফ্ল্যাট।
ধাপ ৩: নির্মাণ খরচ
একটা ফ্ল্যাটের আকার ধরা যাক ১৫০০ বর্গফুট (কমন স্পেসসহ)। বর্তমানে ঢাকায় গড় নির্মাণ খরচ বর্গফুট প্রতি ৩০০০ টাকা ধরলে, একটা ফ্ল্যাট বানাতে লাগবে ৪৫ লক্ষ টাকা।
এই খরচে কী কী থাকবে?
বিল্ডিংয়ের মূল কাঠামো (কলাম, বিম, ছাদ)
ইন্টেরিয়র ফিনিশিং (টাইলস, পেইন্ট, দরজা-জানালা)
ইলেকট্রিক্যাল ও প্লাম্বিং কাজ
লিফট, সিঁড়ি, পার্কিং এর মতো কমন এরিয়ার খরচ
তাহলে, জমির খরচ (৫০ লক্ষ) আর নির্মাণ খরচ (৪৫ লক্ষ) মিলিয়ে প্রতিজনের মোট খরচ হয় ৯৫ লক্ষ থেকে ১ কোটি টাকা।
বাজার মূল্যের সঙ্গে তুলনা
এবার একটু বাজারের দিকে তাকাই। বসুন্ধরার মতো এলাকায় ১৫০০ বর্গফুটের একটা নতুন ফ্ল্যাট কিনতে গেলে আপনার কমপক্ষে ১.৩-১.৫ কোটি টাকা লাগবে।তাহলে ল্যান্ড শেয়ারে আপনি কতটা বাঁচালেন? প্রায় ৩০-৪০%!
একা কিনলে আপনার পকেট থেকে ১.৫ কোটি বেরোত, কিন্তু ল্যান্ড শেয়ারে মাত্র ১ কোটি টাকায় একই মানের ফ্ল্যাট পেয়ে গেলেন।
তাহলে ল্যান্ড শেয়ারের সুবিধাগুলো আর একবার বলিঃ
- জমির দাম ভাগ হয়ে যাওয়ায় আপনাকে পুরোটা বহন করতে হয় না। ফলে বসুন্ধরার মতো দামি এলাকায় ফ্ল্যাট পাওয়া অনেক সহজ হয়ে যায়।
- ডেভেলপারের তৈরি রেডি ফ্ল্যাটে আপনি হয়তো লেআউট বা ডিজাইন বদলাতে পারবেন না। কিন্তু ল্যান্ড শেয়ারে আপনারা সবাই মিলে ঠিক করতে পারেন—ফ্ল্যাটটা কেমন হবে, কত বড় কিচেন চান, বা বারান্দায় কী ধরনের রেলিং লাগবে।
- ধরুন, আপনি ১ কোটিতে ফ্ল্যাট বানালেন। পাঁচ বছর পর সেই এলাকায় ফ্ল্যাটের দাম হয়ে গেল ২ কোটি। আপনার বিনিয়োগ থেকে লাভ হলো ১ কোটি টাকা!
- যেহেতু আপনারা একসঙ্গে প্ল্যান করে বিল্ডিং বানাচ্ছেন, তাই প্রতিবেশীদের সঙ্গে আগে থেকেই একটা বোঝাপড়া তৈরি হয়।
তবে, ল্যান্ড শেয়ারে যাওয়ার আগে কিছু জিনিস মাথায় রাখতে হবে। ছয়জন মানুষের মতামত এক না হতেই পারে। তাই সবার সঙ্গে ভালো understanding আর পরিকল্পনা জরুরি। জমির রেজিস্ট্রি, শেয়ার চুক্তি—এগুলো ঠিকঠাক করতে একজন ভালো আইনজীবীর পরামর্শ নিন।ডেভেলপারের তৈরি রেডি ফ্ল্যাট কিনলে হয়তো সাথে সাথে চাবি হাতে পেয়ে যাবেন, কিন্তু ল্যান্ড শেয়ারে জমি কিনে বিল্ডিং বানানো পর্যন্ত একটু সময় লাগবে।
তাহলে, ঢাকার ব্যস্ত আর দামি এলাকায় কম খরচে ফ্ল্যাট কেনা কি সম্ভব? হ্যাঁ, ল্যান্ড শেয়ারের মাধ্যমে একদমই সম্ভব। এটা শুধু আপনার টাকা বাঁচায় না, বরং নিজের পছন্দমতো বাড়ি বানানোর স্বাধীনতা দেয় আর ভবিষ্যতে লাভের সম্ভাবনাও রাখে। তবে এর জন্য সঠিক পরিকল্পনা, ভালো টিমওয়ার্ক, আর আইনি সাপোর্ট লাগবে।
আপনার কী মনে হয়? ল্যান্ড শেয়ার কি আপনার জন্য সঠিক অপশন হতে পারে? যে কোণও ধরনের consultation প্রয়োজন হলে চলে আসতে পারেন Dhaka Designer এর অফিসে। চায়ের দাওয়াত থাকলো আপানার জন্য।
Comments